শিক্ষাক্রম শিক্ষাব্যবস্থার
প্রাণ। শিক্ষাক্রম হল শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক রূপরেখা। শিক্ষাক্রম
শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে কিছু মতোভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, “Curriculum”
শব্দটি ল্যাটিন শব্দ “Currere” থেকে উদ্ভুত হয়েছে। “Currere” শব্দটি
প্রাচীন রোমে ব্যবহৃত হত যার অর্থ “Course of Study”, আবার কারো কারো মতে,
“Curriculum” শব্দটির উদ্ভব ল্যাটিন শব্দ “Currer” থেকে যার অর্থ “ঘোড়া
দৌঁড়ের পথ” আভিধানিক অর্থে “Curriculum” হল “নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত
হওয়ার জন্য একটি কোর্স বা “A course to be run for reaching certain
goal”।

শিক্ষাক্রমের ধারনা মূলত যুগে যুগে লেখক ভেদে ক্রমাগত পরিবর্তন হয়ে আসছে। তাই শিক্ষাক্রমের একক কোন সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন মানুষ তার ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে শিক্ষাক্রমের নানা সংজ্ঞা প্রদান করে থাকেন। সে সব সংজ্ঞা কেবল সে সব মানুষের প্রয়োজন মিটাতেই কর্যকর ভূমিকা পালন করে। সে সব সংজ্ঞা দ্বারা তাদের মূল্যবোধ ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ পায়।
একজন শিক্ষার্থী কি পড়বে, কে পড়াবে, কোথায় পড়বে, কতদিন পড়বে, কিভাবে পড়বে, শিখন সামগ্রী কিরূপ হবে, কি ধরণের শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি নির্দেশনার সমষ্টিতে শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়। একটি শিক্ষাস্তর সমাপ্ত করে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণীক স্তর কি হবে তা পূর্বেই নির্ধারিত করে নিতে হয়। এ সব কিছুই শিক্ষাক্রমের অন্তর্গত।
সাধারণ ভাবে বলা যায়, “শিক্ষাক্রম হল সুনির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রণীত শিখন অভিজ্ঞতা, পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং শিক্ষাদান কার্যাবলির সমন্বিত রূপ্রেখা যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য ও বাঞ্চিত পরিবর্তন আনার মাধ্যমে শিক্ষার পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জিত হয়”।
শিক্ষাক্রমকে তুলনা করা যেতে পারে শিক্ষা ব্যবস্থার একটি নীল নকশা হিসেবে। একজন প্রকৌশলীর জন্য যেমন নীল নকশা ছাড়া কোন স্থাপনা দাঁড় করানো সম্ভব নয় ঠিক তেমনি, শিক্ষাক্রম ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে দাঁড় করানো যায় না। শিক্ষার সাথে জড়িত যাবতীয় কার্যাবলি শিক্ষাক্রমের অন্তর্গত।
জাতীয় চাহিদার ভিত্তিতেই একটি দেশে শিক্ষাক্রম গড়ে ওঠে। আর জাতীয় চাহিদার মূলে থাকে জাতীয় জীবন দর্শন। সুতরাং বলা যায় যে, একটি জাতির জীবন দর্শনের মধ্যেই সে জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাক্রমের কাঠামো ও প্রকৃতি নিহিত থাকে।
একটি দেশের শিক্ষাক্রম ও এর কাঠামো যে সব বিষয়ের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে সেগুলো হল-
- জাতীয় দর্শন
- রাষ্ট্রীয় আদর্শ
- অর্থনৈঈতিক অবকাঠামোগত অবস্থা
- সামাজিক অবকাঠামোগত অবস্থা
- জাতীয় ঐতিহ্য
- জাতীয় ইতিহাস
- জাতিগত মূল্যবোধ
- জনগণের ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাস
- সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত
- সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত
- জনগণের সমকালীন জীবনব্যবস্থা
- দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যাবস্থা
- বস্তুগত সম্পদের প্রাপ্যতা
- শিক্ষার্থীর সমকালীন চাহিদা
- শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চাহিদা
- সমাজের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড
- সমাজের জরুরী চাহিদা
- ভবিষ্যৎ সমাজ নির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের রূপরেখা ইত্যাদি।
বিশেষ কোন কারণে লক্ষ্য করা যায় যে শিক্ষাক্রমের অতীত অবস্থা নিয়ে তেমন কোন লেখা বা বই পাওয়া যায় না। শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞগণ ও শিক্ষাক্রম গবেষকগণ নোন এক অজ্ঞাত কারণে শিক্ষাক্রমের অতীত অবস্থা নিয়ে তেমন কিছু লিখে যাননি।
তবে এ কথা সত্য যে অনেক প্রাচীনকাল থেকেই শিক্ষাক্রমের ধারনাটি প্রচলিত। স্কটল্যান্ডে সপ্তদশ শতাব্দি থেকেই শিক্ষাক্রম শব্দটির বহুল ব্যবহার রয়েছে বলে জানা যায়।
তবে শিক্ষাক্রম নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি হয় মূলত আমেরিকায়। সেখানে আধুনিক কালের মত শিক্ষাক্রমের বহুল ব্যবহার দেখা যায় ১৮২০ সাল থেকেই। তবে তখনও শিক্ষাক্রমের ধারনা ততটা সংকীর্ণতামুক্ত হতে পারেনি। তখন শিক্ষাক্রম বলতে বোঝান হত “Course of Study” কে। শিক্ষাক্রমকে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু, কোর্স সীমারেখা, শিক্ষক নির্দেশিকা বা Product হিসেবে দেখা হত। এই ধারনায় শিক্ষাক্রমের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় ১৯৩০ সাল পর্যন্ত। এসময় শিক্ষকগণ শিক্ষাক্রমকে পাঠ্যবিষয়ের তালিকা হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পর পর শ্রেণীতে পাঠদানের জন্য ব্যবহার করতেন এবং শিক্ষার্থীরা তা গ্রহন করতো।
প্রাচীনকালে জ্ঞান আহরণ করাই ছিল শিক্ষার মূল লক্ষ্য। এজন্য শিক্ষাক্রমে সুসংবদ্ধ জ্ঞান ও মানসিক শৃঙ্গলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হত। তখন শিক্ষাবিদদের ধারনা ছিল যে এমন কিছু অপরিহার্য বিষয় রয়েছে যেগুলো আয়ত্ত করতে পারলেই শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ হবে। এই ধারনা থেকে শিক্ষাবিদগণ বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে কতগুলো স্থায়ী ও অপরিহার্য পাঠ্যবিষয় অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব দেন।
স্থায়ী ও অপরিহার্য বিষয়গুলো হল-
স্থায়ী বিষয়সমূহঃ
- ব্যাকরণ
- পঠন
- বাগ্মিতা
- যুক্তিতর্কের নিয়ম কানুন
- গণিত
- পশ্চিমা দেশের মহান গ্রন্থসমূহ
- মাতৃভাষা ও তার ব্যবহার (পঠন, লিখন, ব্যাকরণ ও সাহিত্য)
- গণিত
- বিজ্ঞান
- ইতিহাস
- বিদেশি ভাষা
১৯৩০ সালের পর থেকে শিক্ষাক্রমের প্রাচীন ধারনায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এসময় শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। তখন শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞায় অ আসে পরিবর্তন। শিক্ষাক্রম বলতে বিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সকল শিখন অভিজ্ঞতার সমষ্টিকে বুঝানো হতে শুরু করে। Foshay এর মতে, “All the experiences a learner has under the guidance of the school”। এই সংজ্ঞাটি আমেরিকায় বহুদিন যাবত প্রাধান্য বিস্তার করে ছিল।
এ ধারনার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষাক্রমের আধুনিক ও নতুন ধারনা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে আমেরিকান ২জন শিক্ষাবিদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়- Caswell এবং Campbell। তারা ১৯৩৫ সালে শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “The curriculum is composed of all the experience children have under the guidance of the teacher”। অর্থাৎ “শিক্ষাক্রম হল শিক্ষকের পরিচালনায় শিক্ষার্থীর অর্জিত সকল অভিজ্ঞতা”।
শিক্ষাক্রমের এই পরিবর্তিত ধারনার প্রতিফলন Dictionary of Education এ লক্ষ্য করা যায় এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে। এভাবে শিক্ষাক্রমের ধারনাটি সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি লাভ করে। তবে এক্ষেত্রে যে সমস্যাটি থেকে যায় সেটি হল “সকল অভিজ্ঞতা” কথাটি। এটি থেকে মূলত কোন কোন অভিজ্ঞতার কথা বলা হচ্ছে তা সঠিকভাবে বুঝা যায় না।
এই সমস্যা সমাধান করতে আধুনিক শিক্ষাক্রমের প্রবক্তা Ralph Tylor ১৯৫৬ সালে শিক্ষাক্রমের একটি ধারনা দেন। এর মূল কথা হল, “শিক্ষার্থীদের সকল শিখন যা শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের দ্বারা পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয় তাই শিক্ষাক্রম”। (All the learning of students which is planned by and directed by the school to attain its educational goals.) তিনি ৪টি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমের ধারনাটি স্বচ্ছ করার চেষ্টা করেন। এ প্রশ্নগুলো হল-
I. শিক্ষা কি কি উদ্দেশ্য অর্জন করবে?
II. কী কী শিখন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদ্যালয় উল্লেখিত উদ্দেশ্য অর্জন করবে?
III. এ সকল শিখন অভিজ্ঞতা কী উপায়ে সংগঠন ও বিন্যাস করা যাবে?
IV. উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়েছে কিনা তা কিভাবে যাচাই করা যাবে?
শিক্ষাক্রম সম্পর্কে Tylor এর ধারনাকে ৪স্তর মডেল বলা হয়। এ স্তর গুলো হচ্ছে-
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য –> বিষয়বস্তু –> সংগঠন –> মূল্যায়ন
১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে শিক্ষার্থীদের জীবনে বিদ্যালয়ের ব্যাপক প্রভাব দেখা দিলো। ফলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিলো। সে সময় আমেরিকায় শিক্ষাক্রম পরিবর্তন ও পরিমার্জনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন শুরু হল। এ সময় Smith ও Shores শিক্ষার্থীদের সুপ্ত অভিজ্ঞতার বিকাশ সাধনে বিদ্যালয়ের ভূমিকার দিক থেকে শিক্ষাক্রমকে সংজ্ঞায়িত করেন।
তাদের মতে শিক্ষাক্রম হল, “…a sequence of potential experiences set up in school for the purpose of disciplining children and youth in group ways of thinking and acting.”
Hilda Taba ১৯৬২ সালে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের উপাদানসমূহের সমষ্টিগত শিক্ষাক্রমের ধারনা গঠন করেন। তার মতে, “A curriculum usually contains a statement of aims and of specific objectives; it indicates some selection and organization of contents, it either implies or manifests certain patterns of learning and teaching, whether because the objectives demand them or because the content organization requires them. Finally, it includes a program of evaluation of the outcomes.” তার মতে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে শিক্ষাক্রম প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। এজন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রনয়ণের ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাহিদা নিরুপন করা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “…scientific curriculum development needs to draw upon analysis of society and culture, studies of the learners and learning process, and analysis of the nature of knowledge in order to determine the purposes of the school and the nature of the curriculum.” চূড়ান্ত বিচারে তিনি শিক্ষাক্রমকে শিক্ষার্থীদের সমাজের উৎপাদনক্ষম সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার উপায় হিসেবে গণ্য করেন।
১৯৬৭ সালে Wheeler, Tylor এর শিক্ষাক্রমের মডেলে পরিবর্তন করে শিখন-শেখানোকে একটি বৃত্তাকার প্রকৃয়ায় প্রকাশ করেন। তার প্রক্রিয়ার প্রধান উপাদানগুলো হল-

ষাটের দশকের শেষে ও সত্তরের দশকের শুরুর দিকে অনেকেই বিদ্যালয়ের কাজকে শিল্পকারখানার কাজের সাথে তুলনা করেন। শিল্পকারখানায় যেমন কাচাঁমাল প্রকৃয়াজাত করে নানা দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করা হয় তেমনি বিদ্যালয়ের কাজ ও হবে অশিক্ষিত ও অনভিজ্ঞ মানুষদেরকে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এই ধারনা অনুসারে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সার্বিক ফলাফলের উপর বিশেষ গরুত্বারোপ করা হয় এবং শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের বিষয়টি চলে আসে। এ প্রেক্ষিতে ১৯৭০ সালে Mauritz Johnson বলেন, “Curriculum is concerned not with what students will do in the learning situation, but with what they will learn as a consequence of what they do. Curriculum is concerned with results.”
১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) শিক্ষাক্রমের একটি ধারনা প্রদান করে। এতে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এখানে বলা হয়, “A curriculum is an educational project defining: (a) the aims, goals and objectives of an educational action; (b) the ways, means and activities employed to achieve these goals; (c) the methods and instruments required to evaluate the success of the action.”
শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন সংজ্ঞা পর্যালোচনা করে এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে ১৯৮০ সালে Tanner ও Tanner শিক্ষাক্রমের একটি কার্যকর সংজ্ঞা প্রস্তাব করেন। সেটি হল,
“Curriculum is that reconstruction of knowledge and experience, systematically developed under the auspices of the school (or university) to enable the learner to increase his or her control of knowledge and experience.”
যুক্তরাজ্যের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮২ সালে শিক্ষাক্রমের ধারনা গঠনে বলে, “The curriculum is the offering of socially valued knowledge, skills and attitudes made available to students through a variety of arrangements during the tenure they are at school, college or university.”
Marsh ও Stafford পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা এই ২টি বিষয়ের সমন্বয়ে ১৯৮৮ সালে শিক্ষাক্রমের ১টি সুন্দর ধারনা প্রদান করেন। এটি হল, “Curriculum is an interrelated set of plan and experiences which a student completes under the guidance of the school.” পরবর্তিতে Marsh ১৯৯৭ সালে সংজ্ঞাটিকে চিত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করেন।
পর্যালোচনা
শিক্ষাক্রমের প্রচীন ও আধুনিক ধারনা গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, শিক্ষাক্রম বলতে আসলে তেমন কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে বুঝায় না। এই ধারনাটি ব্যাপক এবং সময়ের সাথে সাথে তা আরো বিস্তৃতি লাভ করছে। তাছাড়া, বিভিন্ন কালে, বিভিন্ন পরিবেশে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটেও এর রূপ পরিবর্তনশীল।
অতি ক্ষুদ্র একটি ধারনা পরিকল্পনা বা নকশা থেকে শুরু করে শিক্ষাক্রমের ধারনাটি আজ বর্তমান রূপ লাভ করেছে। ভবিষ্যতে এটি আরো বিস্তৃতি লাভ করবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অর্থাৎ শিক্ষাক্রমের কোন সার্বজনীন সংজ্ঞা কখনই প্রদান করা যাবে না। এটি হবে সদা পরিবর্তনশীল একটি ধারনা, সদা বহমান নদীর মত।
শিক্ষাক্রমের অতীত ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে যা পাওয়া যায় তা হল এই ধারনাটি ক্রমে প্রতি দশকে নতুন নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন কোন কিছুর প্রভাব লক্ষ্য করা গেলেই সেই সাথে পরিবর্তিত হয়েছে শিক্ষাক্রমের ধারনা, যোগ হয়েছে নতুন সকল বিষয়।
আবার বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা থেকে পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় যে দেশ ও সমাজভেদে শিক্ষাক্রমের ধারনায় এসেছে পরিবর্তন। বস্তুত জাতীয় শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই শিক্ষাক্রমের যাবতীয় কর্যক্রম আবর্তিত হয়। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, শিক্ষাক্রমের ভিত্তি হল শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ফলে শিক্ষাক্রমের ধারনায় পরিবর্তন আসবে, সেটিই স্বাভাবিক।
শিক্ষাক্রমের ধারনার ক্রমবিবর্তন
শিক্ষাক্রমের ধারনার ক্রমবিবর্তনকে সহজে নিম্নলিখিত ভাবে দেখানো যায়-

তথ্যপঞ্জী
- মোঃ আবুল এহসান, (১৯৯৭) শিক্ষাক্রম উন্নয়নঃ নীতি ও পদ্ধতি, ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরী, ঢাকা।
- এম, এ, ওহাব মিয়া, (২০০৪) শিক্ষাক্রম প্রনয়ণ ও মূল্যায়ন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
- মালেক, বেগম, ইসলাম ও অন্যান্য, (২০০৭) শিক্ষাবিজ্ঞান ও বাংলাদেশে শিক্ষা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, ঢাকা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন